← Back to Writing

পতনের পরবর্তী প্রহর

আজ আমি অদ্ভুতভাবে নিঃসঙ্গ; দেশের দূরত্ব আমাকে নিথর করে রাখে, তবু গোপনে ধপধপ করে সংবাদ অনুসরণ করি। আগস্টের এই পারাপারের দিনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনকে বলব কী—বিপ্লব না বিদ্রোহ? আমার বুকের ভেতর যেন ক্রমাগত দুলে ওঠে এক উদ্দীপ্ত প্রশ্ন: যারা সংগ্রাম করেছে, যারা জীবন দিয়েছে, তাদের মতো আমিও কি পারতাম একই আত্মত্যাগ?

সামনের সময়টা আমার মনে পড়ে ফরাসি বিপ্লবের পর ঘটে যাওয়া বর্বরতার কথা—সন্দেহভাজন মাত্রেই কাটাকুটি, শাস্তি, নির্বাসন। আজ হয়তো কেউ গিলোটিন তুলে আনবে না; তবু আতঙ্ক আছে, এই উন্মত্ত উৎসবের পরিণতি কী? স্রোতে ভেসে গিয়ে যারা আওয়ামী লীগের ছায়াতে দাঁড়িয়েছিল, তারাও কি শাস্তির সম্মুখীন হবে? কেবল ‘দেশের শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় ঘরে-বাইরে একধরনের শ্বাসরোধী পরিবেশ নেমে আসতে পারে কি না, ভেবে মন অবসন্ন হয়।

তার চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা—পরবর্তী নির্বাচনে যদি উগ্র ধর্মীয় বা জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসে? জিঙ্গোইস্টিক গর্ব আর ধর্মীয় গোঁড়ামিতে কখনোই কোনো কল্যাণ হয়নি। এই দীর্ঘ অন্ধকার থেকে সত্যিকারের আলোর দিকে যেতে হলে চাই অসম সাহস, অসীম ধৈর্য এবং সর্বোপরি যুক্তিবাদী মন। যদি এমন মানুষ হয় দুর্লভ তবুও তাদের দিকে প্রত্যাশায় তাকিয়ে থাকি আমি ।

আমাদের প্রয়োজন দ্রুত শিল্পায়ন, শুধু ফ্যাক্টরি আর সেতুতে নয়—বুদ্ধির উত্তরণে, সমাজের চিন্তার পরিসরে। যেদিন এই দেশ সত্যি সত্যি যুক্তি আর মানবিকতায় বিশ্বাস করবে, সেদিনই বিপ্লবের প্রকৃত সার্থকতা আসবে। আমি চাই দেশের মানুষের হাত ধরে নতুন এক যুগের সূচনা; যেখানে সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিহিংসা আর অন্ধ আবেগ পরাভূত হবে, আর আলোর ঝলকানিতে ফুটে উঠবে এক পরিশীলিত ভবিষ্যৎ। কিন্তু প্রবাসে বসে এসব চাওয়া দিবাস্বপ্ন মাত্র ।

তবুও আমি অপেক্ষায় থাকি —পুনরুজ্জীবনের, পুনর্গঠনের। ঝড় থেমে যাওয়ার পর দেখতে চাই, দেশের আকাশে সত্যিকারের মুক্ত বাতাস বইছে কি না। সেই বাতাসে ভেসে আসুক মানুষের উল্লাস, শিল্প আর যুক্তিবাদের সুর। তবেই কি আমরা আমাদের সংগ্রামের গৌরব খুঁজে পাব না? হয়তো সেটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় বিপ্লব।

আমিই বা এসব বলার কে? Hmm…………….